আজ ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ জেলার ৬ আসনে সংসদ প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের হিসেব-নিকেশ

ভোরের আলো বিডি ডেস্ক:

নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল জনগণ। নির্বাচন কেমন হবে বা কোনো প্রতিরোধ-হট্টগোল হবে কী-না এ নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন ছিলো। কিন্তু এ দ্বাদশ নির্বাচন একদম বাঁধাহীন অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও তা নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার মতো শক্তি অর্জনের আওতায় পড়েনি। সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জে জেলায়ও নির্বিঘ্নে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফিরিস্তি নিম্নে তুলে ধরা হলো।

✍️ ৬টি সংসদীয় আসনে কিশোরগঞ্জ জেলায়  সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন মোট ৪৩জন। তম্মধ্যে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন ও গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলনসহ মোট ৩৩ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানো প্রার্থীদের তালিকায় জাতীয় পার্টির ৪ জন, এনপিপি’র ৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এর ৩ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর ৩ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ৩ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস এর ২ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) এর ২ জন, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির ১ জন, তৃণমূল বিএনপি’র ১ জন, গণফ্রন্ট এর ১ জন, বিএনএফ এর ১ জন এবং ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। ভোটগ্রহণ শেষে সোমবার (০৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনো আসনে প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট কোনো প্রার্থী যদি না পান, তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।এটা নীতিমালায় লেখা আছে।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি (নৌকা) ৭৭ হাজার ৩৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বড় ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম (ঈগল) পেয়েছেন ৭৪ হাজার ১৬২ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মো. আবদুল হাই (লাঙ্গল) ৪৭০৪ ভোট, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলন (কবুতর) ১৭৪৭ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) মো. আশরাফ উদ্দিন (মিনার) ৩৯৮ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোবারক হোসেন (ডাব) ২৪৭ ভোট, এনপিপি’র মো. আনোয়ারুল কিবরিয়া (আম) ২১১ ভোট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আব্দুল আউয়াল (ছড়ি) ১১৪ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৫। ফলে এই আসনে বিজয়ী প্রার্থী ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম এ দু’জন ছাড়া  বাকি ৬ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিন (ঈগল) ৮৯ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ (নৌকা) পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৩২ ভোট। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন (ট্রাক) পেয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৯ ভোট। এ আসনের অন্য চার প্রার্থীর মধ্যে মো. বিল্লাল হোসেন (টেলিভিশন) ১১৪৮ ভোট, মো. আশরাফ আলী (কবুতর) ৫৮৯ ভোট, আলেয়া (আম) ২১৯ ভোট ও মীর তৈয়ব মো. রেজাউল কবির (মাছ) ১২৪ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২। এ হিসেবে বিজয়ী এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল কাহার আকন্দ (নৌকা)।এ দু’জন ছাড়া এই আসনের বাকি ৫ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জনও রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু (লাঙ্গল) ৫৭ হাজার ৬৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) মো. নাসিমুল হক (কাঁচি) পেয়েছেন ৪২ হাজার ১৫০ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. গোলাম কবির ভূঞা (কেটলি) ১০৯০৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মাহফুজুল হক হায়দার (ঈগল) ৭৭৭০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রুবেল মিয়া (ট্রাক) ৮২৬ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) প্রার্থী ওমর ফারুক (মিনার) ৫৭৫ ভোট, এনপিপি’র মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (আম) ২৪৭ ভোট এবং গণতন্ত্রী পার্টির দিলোয়ার হোসাইন ভূঁইয়া নানক (কবুতর) ১৯৯ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৩১৮। ফলে এ আসনে বিজয়ী প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চুন্নু ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেজর (অব.) মো. নাসিমুল হক এ দু’জন ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক (নৌকা) ২ লাখ ৮ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আবু ওয়াহাব (লাঙ্গল) পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৫ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. নছিম খাঁন (মোমবাতি) ২২৮১ ভোট, এনপিপি’র প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদিন (আম) ১২৫৩ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মজিদ (ডাব) ৯৯৯ ভোট এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. শরীফুল আহসান (গামছা) ৮২২ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার ২৫০। ফলে এ আসনে বিজয়ী প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আফজাল হোসেন (নৌকা) ৮৪ হাজার ৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সুব্রত পাল (ঈগল) পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৬৭৪ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. ইমদাদুল হক (মোমবাতি) ৬১২ ভোট, জাতীয় পার্টির মো. মাহবুবুল আলম (লাঙ্গল) ৫২২ ভোট, তৃণমূল বিএনপির মো. সোহরাব হোসেন (সোনালী আঁশ) ২২২ ভোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. সাজ্জাদ হোসেন (গামছা) ১৫৩ ভোট এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. রবিন মিঞা (ছড়ি) ১৩৭ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৮। ফলে এ আসনে বিজয়ী প্রার্থী মো. আফজাল হোসেন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সুব্রত পাল এ দু’জন ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাজমুল হাসান পাপন (নৌকা) ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. রুবেল হোসেন (মোমবাতি) পেয়েছেন ৩ হাজার ২০৬ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির নূরুল কাদের সোহেল (লাঙ্গল) ৩০৫৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুছ ছাত্তার (ঈগল) ২৪৬৯ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোহাম্মদ আয়ূব হুসেন (ছড়ি) ১১৯৪ ভোট এবং এনপিপি’র তারেক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম (আম) ৪৯১ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৪। ফলে এ আসনে বিজয়ী প্রার্থী নাজমুল হাসান পাপন ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থীর জামানত হারিয়েছেন।

বিজয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে যে, যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা পূর্বেও এসব আসনের এমপি ছিলো। নতুন মুখের সম্ভাবনা থাকলেও পূরণো সাংসদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ।ভোটারের উপস্থিতি যা-ই হোক একটি শান্ত-বান্ধব পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category